আমাদের আজকের আর্টিকেলটি কৃষি কাজে পশুর গুরুত্ব সম্পর্কে – যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট-১ এর অন্তর্ভুক্ত |
কৃষি কাজে পশুর গুরুত্ব
মাঠে শস্য উৎপাদন ছাড়াও পশুপাখি এবং মাছ চাষও কৃষিকাজের অন্তর্ভুক্ত। কৃষির সাথে সম্পর্কিত প্রায় প্রতিটি কাজে গবাদিপশুর কিছু না কিছু অবদান রয়েছে। তবে, মাঠে ফসল উৎপাদনে গবাদিপশুর অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ, বাংলাদেশের সকল কৃষিযোগ্য ভূমি যান্ত্রিক চাষের অধীনে আনা আপাতত সম্ভব নয়।
এদেশে পশুশক্তিকে একেবারে বাদ দিয়ে যান্ত্রিক চাষের প্রচলন করতে আরও সময় লাগবে। তাই আমরা বলতে পারি, এদেশে কৃষি আয়ের সিংহভাগই নির্ভর করছে পশুসম্পদের ওপর। পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও কৃষিকাজে পশুশক্তির ব্যবহার হয়। এক তথ্য থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে হালচাষ, গাড়ি টানা ইত্যাদি বাবদ প্রাপ্ত শক্তি এবং গোবর, চনা ইত্যাদির দাম ধরলে পশুসম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ১৫.০% অবদান রাখে।
হালচাষ
জমিতে বীজ বপনের পূর্বে মাটি নরম করার জন্য চাষ করতে হয়। এজন্য বাঁশ বা কাঠের তৈরি লাঙ্গল ও মই ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ষাঁড় বা মহিষ দিয়ে লাঙ্গল ও মই টানা হয়। একেই হালচাষ বলে। ষাড়, মহিষ প্রভৃতি সাধারণত হালচাষের কাজে ব্যবহার করা হয়। আগেকার দিনে যখন কলের লাঙ্গল ছিল না তখন হালচাষ সম্পূর্ণভাবে গবাদিপশুর ওপর নির্ভরশীল ছিল।
বর্তমান যান্ত্রিক যুগে জমি চাষ করার জন্য ট্র্যাক্টর বা কলের লাঙ্গল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু খন্ড খন্ড জমিতে ট্র্যাক্টর চালানো যায় না। ব্যক্তিমালিকানাধীনে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত খন্ড খন্ড জমির সৃষ্টি হয়। এসব জমিতে ট্র্যাক্টরের পরিবর্তে পশুচালিত লাঙ্গলের ব্যবহার হয়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন- ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ট্র্যাক্টর অপেক্ষা পশুচালিত লাঙ্গলের প্রচলন বেশি।
শস্য নিড়ানি
শস্যক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার না করলে শস্যের ক্ষতি হয়। আগাছা পরিষ্কার করার পদ্ধতিকে নিড়ানি বলে। এজন্য কাঠ দিয়ে লম্বা চিরুনির মতো যন্ত্র তৈরি করা হয়। দেশীয় ভাষায় এটিকে মারাকাচি আঁচড়া বলে। মই ও লাঙ্গলের মতোই মারাকাচিও গরু দিয়ে টানা হয়। তাতে আগাছা উঠে আসে। কয়েকদিনের মধ্যেই সে আগাছা রৌদ্রে শুকিয়ে যায় ও মাঠ আগাছামুক্ত হয়।
জমিতে গোবর সারের ব্যবহার
বাংলাদেশের কৃষিজমি দিন দিন অনুর্বর হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে অবৈজ্ঞানিক মাত্রা ও অনুপাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার। কৃষিজমির উর্বরাশক্তি ফিরে পেতে হলে গবাদিপশুর গোবর সার অত্যন্ত প্রয়োজন। এ সার একদিকে যেমন মাটির সার্বিক অবস্থা উন্নত করে অন্যদিকে অধিক ফসল ঘরে তুলতে সাহায্য করে। কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কৃষি উন্নয়নে পশুসম্পদের ভূমিকা অপরিসীম।
ধান মাড়াই
ধান মাড়াইয়ের কাজেও পশুশক্তি ব্যবহৃত হয়। গাছ থেকে ধান ছাড়ানোকে ধান মাড়াই বলে। ধান মাড়াই কাজে একত্রে অনেকগুলো গরু ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে মাঠে ধানগাছগুলো হাত দিয়ে ছাড়িয়ে ধানগাছের বিছানা তৈরি করা হয়। বিছানো ধানের মাঝখানে একটি গরু রাখা হয়। ঐ গরুটির সংগে আরও গরু সারিবদ্ধভাবে বেঁধে ছড়ানো ধানের উপর ঘোরানো হয়। মাঝখানের গরুটি আস্তে আস্তে ঘুরতে থাকে এবং সবগুলো গরুকে চক্রাকারে ঘুরতে সাহায্য করে। গরুর পা দিয়ে দলিত মথিত হয়ে গাছ থেকে ধান আলাদা হয়ে আসে।
আরও দেখুনঃ