কোরবানি আসন্ন। কোরবানির সুস্থ গরু চিনবেন কিভাবে – সেটা নিশ্চয় আপনার ভাবনা বিষয়। এই বিষয়টি আজকাল একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পবিত্র কোরবানির ঈদে দেশে প্রায় এক কোটি গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়। এর প্রায় ৭০ শতাংশই গরু। তাই কোরবানির ঈদ আসলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা গবাদিপশু কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বেশি দামে পশু বিক্রি করতে নানা ধরনের পন্থা অবলম্বন করে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে এসব পশুকে মোটাতাজা করে থাকেন তারা, যা পুরোপুরি স্বাস্থ্যের জন ভয়ানক ক্ষতিকর। এ ধরণের কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা পশুর মাংস খেয়ে মানুষ বিভিন্ন ধরণের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া কোরবানিতে সুস্থ পশু দেবার যে শর্ত, তাও পূরণ হয় না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর এই ধরনের চিন্তার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ মানুষের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালি ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এসব পশু কেনা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
কোরবানির জন্য গরুর বয়স:
গরুর বয়স ন্যূনতম ২ বছর হলে সেটি কোরবানির জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। সেটা বুঝবেন কিভাবে? সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো গরুর দাঁত দেখা।গরুর দাঁত দেখে বয়স যাচাই করে নেয়া যায়। জেনে রাখুন – যদি গরুর নিচের পাটিতে দুধদাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে, তাহলে বুঝতে হবে গরুটি কোরবানির উপযুক্ত।
কোরবানির সুস্থ গরু চিনবেন কিভাবে?
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু চিনবেন যেভাবে?
কৃত্তিমভাবে মোটাতাজাকরণ গবাদিপশু চেনার কিছু উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নেই ইনজেকশন দেয়া কোরবানির পশু চিনবেন যেভাবে।
গরুর শরীরের তাপমাত্রা:
গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ।
গরুর শরীরে পানি জমে যাওয়া:
অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে। আঙুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য গর্ত হয়ে থাকবে।
আপনি একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলেই বিষয়টি ধরতে পারবেন। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মোটা গবাদিপশুর ক্ষেত্রে দ্রুতই মাংস স্বাভাবিক হয়।
গরু দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেবে:
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরু দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। একটু হাঁটলেই হাঁপাতে থাকে। সর্বদাই খুবই ক্লান্ত দেখায়। ইনজেকশন দেয়া গরুর রানের মাংস অস্বাভাবিক রকম নরম হয়। স্বাভাবিকভাবে যেসব গরু মোটা হয় সেগুলোর রানের মাংস শক্ত হয়।
লালা বা ফেনা:
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর লালা ফেনা অস্বাভাবিক হয়। তাই যেসব গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে সেই গরু কেনার চেষ্টা করুন। এগুলো কৃত্রিম উপায়ে মোটা করা পশু নয়।
অতিরিক্ত শান্ত চলাফেরা:
স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেয়া গরু খুব শান্ত থাকে। চলাফেরা করাতে চাইলে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। গরুর ঊরুতে অস্বাভাবিক বেশি মাংস মনে হয়।
গরুর খাবার অভ্যাস:
গরুর মুখের সামনে খাবার ধরুন। মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি নিজ থেকে জিব দিয়ে খাবার টেনে নিয়ে খেতে থাকে তবে বোঝা যাবে গরুটি সুস্থ। যদি অসুস্থ হয়, তবে সে খাবার খেতে চাইবে না।
নাকের ওপরটা ভেজা:
অসুস্থ গরু বা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর নাকের উপরে শুষ্ক থাকে। সুস্থ গরুর নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে। সুস্থ গরুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়।
পা ও মুখ ফোলা:
বিশেষ করে গরুর পা ও মুখ ফোলা, শরীর থলথল করবে, অধিকাংশ সময় গরু ঝিমাবে, সহজে নড়াচড়া করবে না। এসব গরু অসুস্থতার কারণে সব সময় নীরব থাকে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না।
কেমন গরু ভালো:
হাটে যাওয়ার পর উসকোখুসকো, চামড়ার ওপর দিয়ে হাড় দেখা যাওয়া গরু কিনতে চেষ্টা করুন। এগুলো কোনোরকম কৃত্রিম উপায়ে ছাড়াই বাজারে সরবরাহ করা হয়। আর সেই সাথে উপরের বিষয়গুলো একটু মিলিয়ে নিন। মনে রাখবেন চকচক করা পশু বেশিরভাগ সময় ইনজেকশন বা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা হয়ে থাকে।
তাছা আরেকটি জরুরী বিষয় হলো গরু নিখুঁত হওয়া। শিং ভাঙ্গা বা অন্য কোন খুঁত থাকা গরু কোরবানীর জন্য কেনা ঠিক নয়। কারন কোনো খুঁত থাকলে সে পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না। যেমন: লেজের বা কানের বেশির ভাগ অংশ কাটা থাকা, অন্ধ বা এক চোখ কানা হওয়া, এক পা খুঁড়িয়ে চলা বা চলনশক্তিহীন হওয়া, উভয় শিং বা কোনো এক শিং মূল থেকে উত্পাটিত হওয়া। অর্থাৎ এমন কোনো খুঁত বা অপূর্ণতা, যার দ্বারা এটির উপযোগিতা কমে যায় ও মূল্য হ্রাস পায়।
এসব বিষয় নিশ্চত করতে, দিনের আলো থাকতে থাকতেই, সময় নিয়ে দেখে-বুঝে গবাদিপশু কিনুন। রাতের বেলা গরুর এতগুলো বিষয় ঠিকঠাক যাচাই করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
আপনার কোরবানী মহান আল্লাহ কবুল করুন।
আরও পড়ুন: