আমাদের আজকের আর্টিকেলটি গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব সম্পর্কে যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট-১ এর অন্তর্ভুক্ত |
গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব
আমাদের জীবনে গৃহপালিত পশুর ( domestic animal) গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে বহু ধরনের পশু রয়েছে। এসব পশুর মধ্যে অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে মানুষ যেগুলোকে স্থায়ীভাবে লালনপালন করে এবং বংশবৃদ্ধি ঘটায় তাদের গৃহপালিত পশু বলে। আমাদের দেশে গৃহপালিত-পশুর মধ্যে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া বিশেষভাবে পরিচিত। অন্যান্য দেশে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ছাড়াও উট, গাধা, হাতি, খরগোশ, ঘোড়া এবং আরও অনেক ধরনের গৃহপালিত পশু রয়েছে। গৃহপালিত পশুর আদিবাস ছিল জঙ্গলে।
কেন, কীভাবে এবং কখন গৃহপালিত পশু মানুষের সান্নিধ্য লাভ করল তার সঠিক ইতিহাস জানা যায় নি। তবে, যেটুকু জানা গেছে তার আলোকে বলা যায়, আদি মানুষও পশুর সঙ্গে জঙ্গলে বাস করতো। তখনকার দিনেও মানুষ অন্নবস্ত্রের জন্য পশুনির্ভর ছিল। তারা মাংস ভক্ষণ করে ক্ষুধা মেটাতো, চামড়া পরিধান করে শীত ও লজ্জা নিবারণ করতো। হিংস্র জন্তু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য চামড়ার তাবু ব্যবহার করতো। যখন প্রস্তর যুগ এল মানুষ ঘর-বাড়ি তৈরি করা শিখল। জঙ্গল থেকে পশু শিকার করে বাড়িতে আনতে লাগল।
এতে তাদেরকে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হতো। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়বৃষ্টি, সব মৌসুমে শিকার না পাওয়া, জঙ্গলে হিংস্র জন্তুর আক্রমণ ইত্যাদি। এসব অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে পরবর্তীতে মানুষ জঙ্গল থেকে জীবিত পশু ধরে বাড়িতে এনে বেঁধে রাখতো এবং এদেরকে পালন করতো। এভাবেই শুরু হয়েছিল বাড়িতে পশুপালন। মধ্যযুগে কৃষি, পরিবহণ এবং খাদ্য উৎপাদনে পশুর অবদান প্রধান ছিল।
বর্তমান শিল্প বিপ্লবের যুগে কৃষি, শিল্প, খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও আত্মকর্মসংস্থানে গৃহপালিত পশু অবদান রাখছে। গৃহপালিত-পশু থেকে দুধ, মাংস ছাড়াও নানা প্রকার উপজাত দ্রব্য, যেমন- শিং, খুর, চামড়া, পশম, চর্বি, রক্ত, দাঁত, হাড়, নাড়িভুঁড়ি পাওয়া যায়।
দুধ ও মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উপজাত দ্রব্য থেকে নানাবিধ প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়। আমাদের দেশে গৃহপালিত-পশু একটি বিরাট সম্পদ। এ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারলে আমাদের বর্তমান জাতীয় প্রকট সমস্যাসমূহ, যেমন- বেকার সমস্যা ও আমিষের অভাব সমাধান করা সম্ভব হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে এদেশের দারিদ্রতা দূর করে গৃহপালিত-পশু থেকে অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে বাংলাদেশের পশুপাখি ও এদের থেকে উৎপাদিত দ্রব্যের পরিসংখ্যান, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দারিদ্র দূরীকরণে গৃহপালিত-পশুর গুরুত্ব সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আরও দেখুনঃ