Site icon Livestock Gurukul [ লাইভস্টক গুরুকুল ] GOLN

দেশী জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

দেশী জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি দেশী জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে – যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট-২ এর অন্তর্ভুক্ত |

দেশী জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

 

 

বাংলাদেশী গরুর উৎস

কখন, কীভাবে এদেশে গরুর গৃহপালিতকরণ (domestication) হয়েছিল তার কোনো সঠিক তথ্য জানা যায় নি। তবে, মহেঞ্জো-দারো ও হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল থেকেই সম্ভবত গরুর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশে যে গরু পালিত হয়ে আসছে এরা জেবু অর্থাৎ বস ইন্ডিকাস (Bos indicus) প্রজাতিভুক্ত। এদেশের আবহাওয়ার সাথে ভালোভাবে খাপ খেয়ে বেঁচে থাকা এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বস ইন্ডিকাসের অনেকগুলো জাত ভারতীয় উপমহাদেশে বিদ্যমান ছিল।

কিন্তু এ অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তেমন কোনো গরুর জাত ছিল না। যা ছিল তার সবই দেশী গরু। ১৯৩৭ সালের দিকে ভারতের তদানিন্তন ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো বর্তমান বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে বস ইন্ডিকাস প্রজাতির বিশুদ্ধ গরুর জাত, যেমন- হারিয়ানা, সিন্ধি, শাহিওয়াল আনেন (আলী, ১৯৮৫)। বস টরাস ( Bos taurus) প্রজাতির উন্নত জাতের গরু, যেমন- হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান, জার্সি প্রভৃতি আনা হয় ১৯৭৪ সালে (আলী, ১৯৮৫)। নিয়মিত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এসব জাতের ষাঁড়ের বীজ দেশী গাভীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে সংকর জাত সৃষ্টি করা হয় যা এখনও চলছে।

এই সংকর জাতের গরুগুলো বর্তমানে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। এর উদ্দেশ্য উৎপাদন বাড়ানো। বর্তমানে বস টরাস ও বস ইন্ডিকাস ছাড়াও বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার ঘন জঙ্গলে মিথুন বা গয়াল অর্থাৎ বস ফ্রন্টালিস ( Bos frontalis) প্রজাতির গরু দেখা যায়। বস ফ্রন্টালিস একটি বন্য প্রজাতির গরু। এদের বংশধরদের এখনও পোষ মানানোর চেষ্টা চলছে।

 

 

বাংলাদেশের গরুর শ্রেণিবিন্যাস

উৎস অনুসারে বাংলাদেশের গরুকে নিম্নলিখিত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) স্থানীয় – দেশী টাইপ এবং লাল চাঁটগেয়ে।

খ) বিদেশী – হারিয়ানা, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান ও জার্সি।

গ) সংকর – দেশী গাভী X বস টরাস প্রজাতির গরু এবং
দেশী গাভী X মিথুন বা গয়াল

দেশী গরুর প্রথম বাচ্চা প্রসবের গড় বয়সকাল ৪৫ মাস। বর্তমানে মাত্র ২% গাভী কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা গেছে। প্রতিটি গাভী গড়ে ১.৩ কেজি দুধ দেয় এবং গড়পড়তা দোহনকাল (lactation period) সময় ৭-৮ মাস (বি.বি.এস., ১৯৯৪)।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

বাংলাদেশের গরুর জাত

লাল চাঁটগেয়ে

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম লাল চাটগেয়ে গরুর আবাসভূমি। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্রই এদের পাওয়া যায়। এদের উৎপত্তি, উৎপাদন এবং দৈহিক বৈশিষ্ট্য প্রায় দেশী গরুর মতো, তবে আকারে বড়। এদের গায়ের রঙ, শিং ও ক্ষুর লাল বলে এরা লাল চাটগেয়ে (Red Chittagong) নামে পরিচিত। বাংলাদেশের গরুর মধ্যে এরা ভালো জাতের।

জাত বৈশিষ্ট্য

এরা আকারে মাঝারি, গায়ের রঙ হালকা লাল, শিং পাতলা এবং ভেতরের দিকে আংশিক বাঁকানো। গলকম্বল ছোট এবং ঘাড় চিকন। মুখমন্ডল, থুতনি ও পেটের নিম্নাংশ আপেক্ষাকৃত হালকা রঙের। গাভী ও ষাঁড়ের ওজন যথাক্রমে ২৫০-৩০০ ও ৩৫০-৪০০ কেজি। দৈনিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২-৫ লিটার। ওলানগ্রন্থি বেশ সুঠাম, তবে বাট আকারে ছোট। বাণিজ্যিক খামারের জন্য এ জাতের গরু মোটেও সুবিধাজনক নয়। তবে, পারিবারিক খামারে পালনের জন্য মোটামুটি ভালো।

 

 

মাঝারি আকারের দেশী গরু

মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও পাবনার শাহজাদপুরে বেশ কিছু উন্নত ধরনের গরু দেখা যায় যাদের উৎপাদন মোটামুটি ভালো। মাঝারি আকারের এ গরুগুলো অন্যান্য অঞ্চলের গরুর চেয়ে বড়। এ অঞ্চলগুলোতে এদেরকে দুধ উৎপাদনের গরু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, এরা কোনো জাত নয়। মূলত এরা দুধ উৎপাদন ও ভারবাহী পশু হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। বৃটিশ আমলে শাহিওয়াল, সিন্ধি ও হারিয়ানা জাতের কিছু ষাঁড় এসব অঞ্চলে আনার ফলেই এ অঞ্চলের গরুর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এ অঞ্চলগুলোতে প্রচুর ঘাস পাওয়া যায় বলে এদের উৎপাদন ক্ষমতা এখনও টিকে আছে।

 

 

দেশী ছোট গরু

এই ধরনের গরু বাংলাদেশের সর্বত্রই দেখা যায়। এরা আকারে ছোট, গায়ের রঙ সাদা, কালো, লাল, কাজলা বা বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ হতে পারে। গাভী ও ষাঁড়ের গড় দৈহিক ওজন যথাক্রমে ১৫০-২০০ ও ২২৫-২৫০ কেজি। এদের মাথা ছোট এবং অনেকটা বর্গাকৃতির। কপাল চওড়া ও চ্যাপ্টা। শিং চোখা এবং সামনে ও উপরের দিকে বাকানো। কান ও চুট ছোট এবং উন্নত। গলকম্বল মাঝারি গড়নের। ষাঁড়ের প্রজননতন্ত্রের আবৃত চামড়া বা থলে আকারে ছোট। দেশী গরু খুবই কষ্টসহিষ্ণু এবং এরা প্রধানত শক্তির কাজে ব্যবহৃত হয়। এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। একেকটি গাভী গড়ে ০.৬ লিটার দুধ দেয়। এদেরকে দ্বৈত ব্যবহারোপযোগী পশু বলা হয়।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version