আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পশু দিয়ে নিজ হাতে হালচাষ করা সম্পর্কে – যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট-১ এর অন্তর্ভুক্ত |
পশু দিয়ে নিজ হাতে হালচাষ করা
প্রাসঙ্গিক তথ্য
হালচাষ বা গবাদিপশু দিয়ে জমি কর্ষণ আমাদের দেশে একটি অতি পুরাতন পেশা যা কৃষির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গণ্য। গ্রাম বাংলার কৃষকরা ভোর না হতেই লাঙ্গল কাঁধে মাঠের পানে ছুটেন। দৃশ্যটি খুবই মনোরোম। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কৃষক মাঠে যাওয়ার আগে তার গরু, লাঙ্গল, জোয়াল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে নেন। জমি, গরু, লাঙ্গল ও মই এই চারটি উপকরণ সমন্বয়ে জমিতে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
জমি, একজোড়া বলদ, লাঙ্গল, জোয়াল, মই, শলা, টুই, রশি ইত্যাদি।
পূর্ব প্রস্তুতি
- হালচাষের জন্য সকাল অথবা বিকেলে সময় নির্ধারণ করুন।
- হালচাষে যাবার পূর্ব রাতে গরুকে ভালোভাবে ঘাস ও দানাদার খাবার দিন।
- হালচাষের জন্য মাঠে যাবার পূর্বে গরুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার পানি পান করান।
- কীভাবে গরুর জোয়াল এবং জোয়ালের সাথে লাঙ্গল বাধতে হয় তা পার্শ্ববর্তী কৃষকের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে শিখুন এবং নিজে করার জন্য চেষ্টা করুন।
প্রধান কর্ষণ যন্ত্রপাতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
দেশী লাগল
বাংলাদেশে এটি অতি পরিচিত কর্ষণ যন্ত্র। একটি বাঁকা কাঠের আগায় লোহার একটি ফলক বা ফলা সন্নিবেশে এটি প্রস্তুত করা হয়। এর বিভিন্ন অংশ নিম্নরূপ-
কাঠের শরীর
লাঙ্গলের শরীর গজারি, বেল, কুল প্রভৃতি কাঠের বাঁকা কান্ড দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। শরীরের উপরের অংশকে বলা হয় হাতল। হাতলের শেষ প্রান্তে মুটি থাকে। এই মুটি চেপে ধরে কৃষকরা লাঙ্গল চালিয়ে থাকেন। শরীরের নিচের সরু অংশে ফলক লাগানো হয়। শরীরের মধ্যবর্তী জায়গায় একটি ছিদ্র করা হয় এবং সে ছিদ্রে ঈশ সংযোজন করা হয়।
ঈশ
এটি একটি সরু চ্যাপ্টা কাষ্ঠদন্ড যা লম্বায় ২.৫ মিটার অর্থাৎ প্রায় আট ফুট। ঈশের গোড়ার অংশ লাঙ্গলের শরীরের ছিদ্রপথে শক্তভাবে আটকানো থাকে, ঈশের অগ্রভাগ অপেক্ষাকৃত চিকন বা সরু হয়। এতে ৪-৫টি দাঁত বা খাঁজকাটা হয়। এ দাঁতগুলোর যে কোনো একটি রশি বেঁধে জোয়ালের সঙ্গে লাঙ্গল লাগানো হয়।
খিল
ঈশ লাঙ্গলের শরীরের ছিদ্রের মধ্যে শক্ত করে আটকানোর জন্য একটি কাঠের টুকরো ব্যবহার করা হয়। দেশীয় কাথায় একে খিল বা গোঁজ বলে।
হাতল
লাঙ্গলের শরীরের উপরের যে অংশ হাতে ধরে গরুর সাহায্যে লাঙ্গল চালনা করা হয়, তাকে হাতল বলে। হাতলের উপরের প্রান্তে মুটি থাকে। এই মুটিতে চাপ প্রয়োগ করে চাষি গরু দিয়ে জমি চাষ করেন।
ফলক
গ্রাম্য ভাষায় এটিকে লাঙ্গলের ফাল বলে। এটি নরম স্টিলপাত বা লোহার পাত দিয়ে তৈরি এবং লম্বায় ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। লাঙ্গলের সরু আগার উপরের দিকে লোহার পিন দিয়ে ফলকটি আটকে দেয়া হয়। এ ফলার সাহায্যেই লাঙ্গল মাটি চিরে জমি কর্ষণ করে।
জোয়াল
জোয়াল ভূমি কর্ষণের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। জোয়াল ছাড়া লাঙ্গল দিয়ে ভূমি কর্ষণ সম্ভব নয়। জোয়ালের দু’প্রান্ত রশি দিয়ে একজোড়া গরুর কাধে বেঁধে দেয়া হয়। লাঙ্গলের ঈশ রশির সাহাযো জোয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে বেঁধে জমি কর্ষণ করা হয়। জোয়াল কাঠের অথবা বাঁশের হতে পারে। জোয়াল যেন বলদের কাঁধের নির্দিষ্ট স্থানে থাকে সেজন্য বাশের দু’টি শলা দু’প্রান্তে এবং রশি দিয়ে জোয়ালকে কাধের সাথে বাধা হয়।
মই
আমাদের দেশে প্রধানত বাশের তৈরি মই ব্যবহৃত হয়। বাশের তৈরি মই মোট তিনটি ফালি দিয়ে তৈরি হয় যার মধ্যবর্তী ফালিটি সোজা রাখা হয়। দু’পার্শ্বের দু’টি ফালি কতকটা অর্ধচন্দ্রাকারে বাঁকানো থাকে এবং গাইট দিয়ে সংযোজন করা হয়। গাইটগুলোর প্রায় ৩.৭৫ সে.মি. (১.৫ ইঞ্চি) করে উভয়দিকে বাড়তি রাখা হয়। প্রান্তিক গাইট দু’টির মাথায় পাটের রশি দিয়ে জোয়ালের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়। দু’টি সোজা বাঁশের ফালি দিয়েও মই তৈরি করা যায়।
আরও দেখুনঃ