Site icon Livestock Gurukul [ লাইভস্টক গুরুকুল ] GOLN

বিদেশী উন্নত জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

বিদেশী উন্নত জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি বিদেশী উন্নত জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে – যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট-২ এর অন্তর্ভুক্ত |

Table of Contents

Toggle

বিদেশী উন্নত জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

আমরা জানি, প্রাণীর বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের বিভিন্নতা প্রাণীর জাত নির্ধারণ করে। এজন্য বিদেশী উন্নত গরুর জাত ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করার আগে এদের পূর্ব বংশধরদের কথা জানা উচিত। বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানকালের গরুর পূর্বপুরুষ বস টরাস ও বস ইন্ডিকাস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।

ইউরোপের সকল গরু বস টরাসের অন্তর্ভুক্ত। এই প্রজাতির প্রধান শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের কোনো চুট নেই। যেমন- হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান, জার্সি, আয়ারশায়ার, ব্রাউন সুইস প্রভৃতি জাতের গরু। বস ইন্ডিকাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এদের চুট আছে এবং কোনো কোনো জাতের ক্ষেত্রে তা বেশ বড়। সিন্ধি, শাহিওয়াল, হারিয়ানা এই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ।

সারণি ১০ : বস টরাস ও বস ইন্ডিকাস গরুর মধ্যে পার্থক্য

 

 

গরুর বিভিন্ন জাতকে তিন উপায়ে বিভক্ত করা যায়। যথা-

উৎপত্তি ও আকার অনুযায়ী জাতের শ্রেণিবিন্যাস

ব্যবহার বা কাজ অনুযায়ী গরুর জাতের শ্রেণিবিভাগ

 

 

 

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতের বৈশিষ্ট্য আলোচনা

হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান (Holstein Friesian)

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান :

এই দুধাল জাতের গরুর উৎপত্তিস্থান হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড। বর্তমানে প্রথিবীর প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়।

জাত বৈশিষ্ট্য

হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান দুধাল জাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের গরু। গাভীর গড়পড়তা ওজন ৭৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ১১০০ কেজি। শরীর বেশ পুষ্ট, পেছনের অংশ ভারি এবং ওলানগ্রন্থি বেশ বড়। পেছনের পা সোজা, লম্বা এবং অপেক্ষাকৃত সরু, মাথা ও শরীর পেশিযুক্ত। গাভী শান্ত প্রকৃতির, কিন্তু ষাড়গুলো বদমেজাজি। গো-চারনের অভ্যাস মাঝারি ধরনের। এদের গায়ের রঙ সাদা, কালো মিশ্রিত। উভয় রঙের কোনো একটির প্রাধান্য হতে পারে। জন্মের সময় বাছুরের ওজন গড়ে ৪০-৪৫ কেজি হয়, বয়ঃপ্রাপ্তি দেরিতে ঘটে। এজাতীয় গাভী বছরে ৪৫০০-৯০০০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। দুধে চর্বির পরিমাণ মাত্র ৩.৫%। দুধ উৎপাদনকারী গাভীর মধ্যে এরা অধিক দুগ্ধদানের জন্য বিখ্যাত।

জার্সি ( Jersey)

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

ইংল্যান্ডের জার্সি, গুয়েরেন্সি, অ্যালডারনি ও সার্ফ চ্যানেল দ্বীপসমূহে এদের উৎপত্তি। ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় সর্বত্র, বিশেষ করে, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার পূর্ব ও দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোতে এদের বিস্তৃতি রয়েছে।

জাত বৈশিষ্ট্য

বিদেশী দুধাল জাতের গাভীর মধ্যে জার্সির আকার সর্বাপেক্ষা ছোট। গাভীর ওজন ৪০০-৫০০ এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০-৮০০ কেজি। দেহের গঠন সুন্দর ও নিখুঁত, ওলানগ্রন্থি বেশ বড় এবং সুগঠিত। শিরদাড়া সোজা এবং মাথা ও ঘাড় সামঞ্জস্যপূর্ণ। গায়ের রঙ ফিকে লাল (fawn)। জিহ্বা এবং লেজের রঙ কালো। গো-চারনে অভ্যস্ত। জার্সির বাচ্চা আকারে ছোট ও দুর্বল হয়। তাই জন্মের পর বাচ্চা লালনপালন কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। বাচ্চার জন্ম ওজন ২২-৩৩ কেজি পর্যন্ত হয়। অতি অল্প সময়ে জার্সি গাভী বয়ঃপ্রাপ্ত হয় এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুধ উৎপাদনে সক্ষম। ভালো মান ও অধিক পরিমাণ দুধ উৎপাদনের জন্য জার্সি জাতের গরু বিখ্যাত। গাভীর বার্ষিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫০০-৪০০০ লিটার দুধে চর্বির গড় হার ৫%। জার্সি গরু মাংসল হয় না।

আয়ারশায়ার (Ayreshire )

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

আয়ারশায়ারের উৎপত্তি স্কটল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম আয়ারশায়ার প্রদেশে। এ জাতের গরু গ্রেট বৃটেন, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায়।

জাত বৈশিষ্ট্য

আয়ারশায়ার গাভীর ওজন ৫৫০-৭০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৮৫০-১১৫০ কেজি। এদের শিরদাড়া সোজা এবং শিং প্রসারিত ও বাঁকা। ওলানগ্রন্থি বেশ বড় ও সুগঠিত। গায়ের রঙ লালের মধ্যে সাদা ফোঁটা ফোঁটা। সাধারণত মাথা ও শরীরের সম্মুখভাগে গাঢ় রঙ দেখা যায়। গাভীর রঙ হালকা লাল, তবে ষাঁড়ের রঙ গাঢ় লাল। গো-চারনে ভালোভাবে অভ্যস্ত। আয়ারশায়ার বয়ঃপ্রাপ্ত হয় ওয়েরেন্সির পরে কিন্তু হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান অপেক্ষা তাড়াতাড়ি। হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ানের বাছুরের ন্যায় আয়ারশায়ারের বাছুর জন্মের সময় সতেজ ও সবল হয়। বাছুরের জন্ম ওজন (birth weight) ৩৫-৪০ কেজি। এরা দুধাল গাভী হিসেবে পরিচিত। দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় ৫০০০ লিটার। দুধে চর্বির হার ৪%।

লাল সিন্ধি (Red Sindhi)

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচি ও হায়দারাবাদে এদের উৎপত্তি। এ জাতের গরু পাকিস্তানের সর্বত্রই দেখা যায়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে এদের বিস্তৃতি রয়েছে।

জাত বৈশিষ্ট্য

গাভীর ওজন ৩৫০-৪০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৪২৫-৫০০ কেজি। চুট উন্নত, গলকম্বল ও নাভীর চারদিকের চামড়া বেশ ঢিলা, কপাল বেশ প্রশস্ত ও উন্নত, শিং মাঝারি আকারের এবং কিছুটা ভেতরের দিকে বাঁকানো। কান মাঝারি আকারের, ওলান গ্রন্থি বড়। গায়ের রঙ গাঢ় লাল, কিন্তু কালচে হলুদ থেকে গাঢ় মেটেও হতে পারে। বাছুরের জন্ম ওজন ২২-২৫ কেজি। এরা ভারতীয় উপমহাদেশে দুধাল গাভী হিসেবে পরিচিত। সিন্ধি গাভী বছরে গড়ে ২০০০ লিটার দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ ৫%। এ জাতের গরু আমাদের দেশের আবহাওয়ায় মোটামুটি ভালোভাবে খাপ খাওয়াতে পারে। সিন্ধি বলদ একটু আলসে প্রকৃতির। কিন্তু ষাঁড় ও বাংলাদেশী গাভীর মিলনে সৃষ্ট বলদ হাল-চাষ ও গাড়ি টানার জন্য ভালো। বকনা তিন বছরেই গাভীতে পরিণত হয়।

শাহিওয়াল (Shahiwal

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টোগোমারি জেলায় শাহিওয়ালের উৎপত্তি। পাকিস্তানের বড় বড় শহর ও তার চারপার্শ্বে এ জাতের গাভী দেখা যায়। এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশেই এ জাতের গরুর বিস্তার ঘটেছে। পাকিস্থানের ন্যায় ভারতেও সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে শাহিওয়াল গাভীর অনেকগুলো বড় বড় খামার আছে।

জাত বৈশিষ্ট্য

শাহিওয়াল গাভী আকারে বেশ লম্বা, বলিষ্ঠ ও পেশিযুক্ত। মাথা প্রশস্ত এবং শিং ছোট, কিন্তু মোটা। গাভী ও ষাঁড়ের ওজন যথাক্রমে ৪৫০-৫৫০ ও ৬০০-১০০০ কেজি। বাছুরের জন্ম ওজন ২২-২৮ কেজি। চুট ও গলকম্বল বেশ বড়। নাভির চারপাশের চামড়া মোটা ও ঢিলা। ওলানগ্রন্থি বড় ও ঝুলন্ত। গায়ের রঙ সাধারণত হাল্কা লাল বা হাল্কা হলুদ। কোনো কোনো গাভীর ক্ষেত্রে দেহের বিভিন্ন অংশে সাদা দাগ দেখা যায়। শাহিওয়াল পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে দুধাল গাভীর জাত হিসেবে সুপরিচিত। এরা বছরে ৩০০০-৪০০০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।

হারিয়ানা (Hariana)

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

ভারতের রোহটক, হিসার, গুরগাও, কার্নাল ও দিল্লি হারিয়ানার আদি বাসস্থান। ভারতের সব জায়গায় হারিয়ানা দেখা যায়। তাপ সহনশীলতা হারিয়ানার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেজন্য ল্যাটিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিনাঞ্চলে এদের সাহায্যে বিভিন্ন প্রকার সংকর জাতের গরু উৎপাদন করতে দেখা যায়।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

জাত ও বৈশিষ্ট্য

গাভী ও ষাঁড়ের ওজন যথাক্রমে ৪০০-৫০০ ও ৬০০-১১০০ কেজি। উচ্চতা ১৪০-১৪৫ সে.মি.। বাছুরের জন্ম ওজন ২২-২৫ কেজি। মাথা লম্বা ও অপেক্ষাকৃত সরু। শিং লম্বা, চিকন ও মসৃন। ওলান সুগঠিত ও আটোসাটো, গায়ের রঙ হালকা ধূসর বা সাদাটে। কোনো কোনো ষাঁড়ের ঘাড়, চুট, বুক প্রভৃতি স্থান গাঢ় ধূসর রঙের। হারিয়ানা অত্যধিক পরিশ্রমী ও শক্তিশালী গরু। এরা দ্বৈত কাজ, যথা- দুধ উৎপাদন ও গাড়ি টানার উপযোগী। বার্ষিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ২০০০ কেজি। দুধে চর্বির পরিমাণ ৫%। বকনা ৩-৪ বছরের মধ্যে গাভীতে পরিণত হয়।

থারপারকার (Tharparkar)

উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের থারপারকার জেলায় এদের উৎপত্তি। সিন্ধু প্রদেশের সর্বত্র এবং পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশে এদের পাওয়া যায়।

জাত বৈশিষ্ট্য

থারপারকার বেশ শক্তিশালী গরু। গায়ের রঙ সাদা। এরা মধ্যম আকৃতির ও হারিয়ানার চেয়ে কম উচ্চতাসম্পন্ন। শিং ও চুট মধ্যম আকারের। গলকম্বল বর্ধিত কিন্তু শাহিওয়াল ও সিন্ধির চেয়ে ছোট। দেহ সুঠাম ও সুন্দর।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version