লেয়ার পালনের বাসস্থান প্রস্তুতকরণ আজকের আলোচনার বিষয়। “লেয়ার পালনের বাসস্থান প্রস্তুতকরণ [ Layer rearing ]” ক্লাসটি “পোলট্রি রেয়ারিং এন্ড ফার্মিং ১ [Poultry Rearing & Farming 1]” কোর্সের পাঠ্য। “লেয়ার পালনের বাসস্থান প্রস্তুতকরণ [ Layer rearing ]” ক্লাসটি দশম শ্রেণীর [ Class 10 ], ৪র্থ অধ্যায়ের [ Chapter 4 ] পাঠ। নিয়মিত ক্লাস পেতে গুরুকুল কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ গুরুকুলে যুক্ত থাকুন।
লেয়ার পালনের বাসস্থান প্রস্তুতকরণ
পালন পদ্ধতি অনুযায়ী লেয়ার মুরগির সেড প্রস্তুতকরণ Preparation of Layer Chicken Shed as Per Rearing Method
পোল্ট্রি খামার স্থাপনের জন্য সেড নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে খামারের লাভ-ক্ষতি সেডের নির্মাণ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে । তাই পরিবেশের সাথে ভারসাম্যতা বজায় রেখে উপযুক্ত সেডের নির্মাণ করতে হবে। পারিপার্শিক পরিবেশ ও জৈব নিরাপত্তা বিবেচনায় রাখতে হবে।
লেয়ার খামারের স্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় (Considerations of Layer Farm Location Selection):
- খামার তৈরির নির্বাচিত স্থান লোকালয় বা আবাসিক ঘনবসতি এলাকা হতে দূরে শুষ্ক, উঁচু ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিদ্যমান এমন হতে হবে ।
- যাতায়াতের সুবিধা থাকতে হবে ।
- অন্য মুরগির খামার বা প্রাণি র ঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে হতে হবে।
- পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- আশপাশে পচা ডোবা ও নর্দমা মুক্ত হতে হবে ।
- পানি ও বিদ্যুতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
- ডিম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের সহজলভ্যতা থাকতে হবে ।
- ডিম বিপণনের সুবিধা থাকতে হবে।
- ভবিষ্যতে খামারটি সম্প্রসারণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে জমি নির্বাচন ও ক্রয় করতে হবে।
- বন্য জন্তু বা অবাঞ্ছিত লোকজন দ্বারা খামার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন স্থান হবে।
- বিষ্ঠা ও লিটার সরিয়ে ফেলার সুযোগ থাকতে হবে।
- মাটি বেলে দোআঁশযুক্ত হবে।
- খামার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়া সুবিধা থাকতে হবে ।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজঃ
- তোমার বাড়ীর আশ পাশে যে সমস্ত লেয়ার খামার আছে তার যেকোনো একটির স্থান নির্বাচনের বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ কর।
খামারের অবকাঠামো নির্মাণ (Construction of Farm Infrastructure)
মুরগির ঘর নির্মাণে কোনো ভুল বা ত্রুটি করা চলবে না। মুরগিকে আরামদায়ক পরিবেশ নিরাপদ ও রোগমুক্ত রাখার জন্য ঘরের প্রয়োজন। খোলামেলা উঁচু জায়গায় প্রচুর আলো ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় ঘর তৈরি করতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে প্রধানত দুই ধরনের ঘরে মুরগি পালন হয়। যথা:
(১) খোলামেলা ঘর
(২) আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত ঘর।
লেয়ার খামারের খোলামেলা ঘর তৈরির বিবেচ্যবিষয় (Considerations of constructing an open house layer farm):
১. ঘরের অবস্থান ও প্রকৃতি:
- এ ঘর দক্ষিণে খোলা থাকে ।
- প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘরের খোলামেলা স্থানে পর্দা দ্বারা ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে ।
- ঘরের মধ্যে মুরগি আবদ্ধ রাখার জন্য খোলা স্থান জাল দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয় ।
- ঘরে লিটার ধরে রাখার জন্য খোলা স্থানের নিচের অংশ ১-১.৫ ফুট দেয়াল দ্বারা ঘিরে দেওয়া থাকে ।
- নিরাপত্তার জন্য ঘরের সম্পন্ন অংশ তারের জাল দ্বারা ঘেরা থাকে ।
২. ঘরের প্রশস্ততা :
- সাধারণত ছোট খামার ঘরের প্রশস্ততা খাঁচার আকার অনুসারে করতে হয়।
- লিটার পদ্ধতিতে ঘরের প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ১০ ফুট এবং উর্ধ্বে ২৫ ফুট করা যায়।
- বাণিজ্যিক খামার সর্বনিম্ন ৩০ ফুট এবং সর্বাধিক ৪০ ফুট করা যায় ।
- ৪০ ফুটের অধিক প্রশস্ত হলে ঘরে ভেন্টিলেশন সমস্যা হয় ।
- অধিক প্রশস্ত ঘরে অতিরিক্ত খুঁটি ও পিলার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।
- ঘরের মধ্যে অতিরিক্ত পিলার মুরগির জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম রাখতে অসুবিধা হয় এবং ময়লা পরিষ্কার করতে সমস্যা হয় ।
- ঘরের এই প্রশস্ততা বাড়ন্ত ও লেয়ার মুরগি পালনের উপযোগী।
৩. ঘরের দৈর্ঘ্য:
- যে কোনো পরিমাপের সুবিধাজনক দৈর্ঘ্য থাকতে হবে।
- স্বয়ংক্রিয় খাদ্যপাত্র স্থাপন করতে হলে খাদ্য সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক্রমে ঘরের দৈর্ঘ্য ঠিক করতে হয় ।
- বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ডিজাইন ও পরিমাপের স্বয়ংক্রিয় খাদ্যপাত্র তৈরি করে।
- স্বয়ংক্রিয় খাদ্য পাত্র ঘরের মাঝ বরাবর স্থাপন করা হয়।
৪. ঘরের উচ্চতা:
- ছোট চালা ঘরের উচ্চতা মেঝে থেকে চালের ছাচ সর্বনিম্ন ৬(ছয়) ফুট এবং ঘরের মেঝের মধ্য বরাবর চালের উচ্চতা ১০(দশ) ফুট হওয়া উচিত।
- বাণিজ্যিক খামারে সিলিং বা চালার তল পর্যন্ত সর্বনিম্ন ৮(আট) ফুট, গ্রীষ্মপ্রধান দেশের জন্য ১০(দশ) ফুট করা ভালো ।
- খাঁচা বা মাচার নিচে ময়লা জমা হওয়ার ব্যবস্থা থাকলে হাইরাইজ ঘর তৈরি করতে হয়। ঘরের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বহুতল ঘরের দেয়ালের উচ্চতা ১০(দশ) ফুট এবং ঘরের মাঝ বরাবর চালের শীর্ষদেশ ২০ ফুট।
৫. ঘরের চালাঃ
- ব্যবহারিকভাবে বেশির ভাগ মুরগির জন্য দু’চালা টিন বা এসবেস্টর শিট দ্বারা তৈরি করা হয় । চালের শীর্ষদেশের চাল এক চতুর্থাংশ অথবা এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত হয়।
- চালের ছাদ বাড়ন্ত ও ঝুলন্ত রাখতে হয় (২.৫-৩ ফুট), যেন বৃষ্টির ভিতরে প্রবেশ না করে । মুরগির ঘর কংক্রিট ছাদযুক্ত করা যায়।
৬. তাপ নির্গমনঃ
- ঘরের ভিতর উৎপাদিত দূষিত বাতাস গরম বাতাস ও তাপ নির্গমনের জন্য চালের উপর ব্যবস্থা রাখা হয়।
- গরম বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ এগজস্ট ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা হয়।

৭. তাপ নিরোধক:
- টিন বা এসবেস্টর চালাযুক্ত ঘরের তাপ নিরোধক সিলিং ব্যবহার করতে হয়।
- সমস্ত ঘরের এক প্রান্তে সম্ভব বিশেষ তাপ নিরোধক শিট, কাঠ, হার্ডবোর্ড ইত্যাদির সাহায্যে ঠান্ডা স্থান তৈরি করা যায়। এই স্থানের সাথে গম্বুজাকৃতির ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকে। গরমের সময় এখানে মুরগি আশ্রয় নিতে পারে ।
৮. ঘরের মেঝে:
- যখন খামারে কোনো বিশেষ রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তখন ঘরের মেঝে অবশ্যই পাকা করা প্রয়োজন ।
- যে সমস্ত এলাকায় মাটি ভিজা অথবা দ্রুত আর্দ্রতা শোষণ করে এবং পরিবেশ দ্রুত আর্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা সেখানে ঘরের মেঝে অবশ্যই পাকা করতে হয়।
- বালু ও কাঁকর মিশ্রিত স্থানে নির্মিত ঘরে কাঁচা মেঝের উপর ব্রয়লার, লেয়ার ও ব্রিডার মুরগি পালন করা যায়।
- খাঁচা বা মাচার নিচে ময়লা পরিষ্কার করার ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে কাঁচা বা পাকা মেঝে নিৰ্মাণ করা যায়।
৯. ঘরের দরজা:
- ঘরের এক প্রান্তে দরজা থাকে ।
- বাণিজ্যিক খামারে ঘরের দরজা বড় ও প্রশস্ত হওয়া প্রয়োজন ।
- বড় ও প্রশস্ত দরজার ভেতর দিয়ে ঘর পরিষ্কার করার সময় ট্রাক্টর ঢুকে ময়লা বের করে নিতে সুবিধা হয় ।
- ছোট ঘরে ট্রলির সাহায্যে ময়লা পরিষ্কার করার উপযোগী দরজা থাকে ।
১০. ঘরের অবস্থান :
- বাতাস প্রবাহ গতিবেগের বিপরীতে বাচ্চা ও বাড়ন্ত মুরগির ঘর থাকবে ।
- প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের জন্য ঘরগুলো পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা হলে ভালো ।
- দুই শেডের মধ্যে কমপক্ষে ৩০-৪০ ফুট ফাঁকা স্থান থাকতে হয় ।
১১. পরিবেশ :
- খোলামেলা ঘর স্থাপনের জন্য চারিদিকে পর্যাপ্ত ফাঁকা ও খোলামেলা স্থানের প্রয়োজন।
- আবহাওয়া অবস্থা ও মুরগির প্রকৃতি অনুসারে ঘরের আকৃতি ও এবং স্থান নির্বাচন করতে হয়।
- বিষ্ঠা ও লিটার নিষ্কাশনের সুবিধাজনক স্থান প্রয়োজন ।
১২. বিভিন্ন পদ্ধতিতে লেয়ার মুরগি প্রতি মেঝেতে স্থান :
তাত্ত্বিক কাজ:
১০০টি ডিমপাড়া মুরগির ঘরের মেঝের পরিমাপ হিসেব করে দেখাও ।
লেয়ার পালনের বাসস্থান প্রস্তুতকরণ নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ