Site icon Livestock Gurukul [ লাইভস্টক গুরুকুল ] GOLN

সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য – যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট-২ এর অন্তর্ভুক্ত |

সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য

 

 

সংকর গরু কী

উন্নত জাতের ষাঁড়ের সঙ্গে দেশী গাভীর মিশ্রণে যে জাতের গরু উৎপাদন করা হয় তাকে সংকর জাতের গরু বলে। সংকর জাত আসলে মিশ্রজাত। সংকর জাত সৃষ্টি করার প্রক্রিয়াকে সংকরায়ন বলে। আমাদের দেশে দেশী অনুন্নত গাভীকে বিদেশী উন্নত জাতের ষাঁড়ের মাধ্যমে সংকরায়ন করে তার থেকে উন্নত সংকর বাছুর উৎপাদন করা হচ্ছে। সংকরায়নের জন্য আগে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড় আমদানি করা হতো। কিন্তু দেশের চাহিদার তুলনায় এত বেশি ষাড় আমদানি করা ব্যয়বহুল।

এজন্য কমসংখ্যক ষাঁড় দিয়ে বেশিসংখ্যক গাভীকে প্রজনন করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অর্থাৎ কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা দেশে চালু হয়েছে। কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থায় উন্নত জাতের ষাড় থেকে সংগ্রহ করা বীর্য বা বীজ গাভীর জনন অঙ্গে সংস্থাপন করে ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হয়। আমাদের দেশে এই পদ্ধতি খুব ধীরে ধীরে চালু হয়েছে। বর্তমানে গ্রাম ও শহর সর্বত্রই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বহু সংকর বাছুর উৎপাদিত হচ্ছে।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সংকর গরু সৃষ্টির উদ্দেশ্য

সংকর জাতের গরু সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য অনুন্নত জাতের গরুকে উন্নত করে অধিক হারে দুধ, মাংস ও শক্তি উৎপাদন করা। দুধ, মাংস ও শক্তি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত গরুর জাতগুলো বিক্ষিপ্তভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে। যেমন- দুধ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জাতের গরু হলস্টেইন- ফ্রিজিয়ান ও জার্সির আদি বাস ইউরোপে।

শক্তি ও মাংস উৎপাদনকারী জাতের গরু অমৃত মহল, কৃষ্ণ ভেলি, হারিয়ানা, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি ভারতে পাওয়া যায়। মাংস উৎপাদনকারী জাত, যেমন- ব্রাহ্মণ, অ্যাঙ্গাস, হারফোর্ড প্রভৃতি আমেরিকায় পাওয়া যায়। এসব জাতের গরু অন্য দেশের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। লালনপালনে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। তারপরও অনেক সময় বাঁচানো কঠিন হয়।

একদেশ থেকে অন্যদেশে এসব জাতের গরু স্থানান্তর করা ব্যয়বহুল। ফলে গরুর ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায় না। এসব অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে খুব সীমিত সংখ্যায় এ জাতের ষাঁড় বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর নিজ দেশের গাভীর সঙ্গে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে সংকর জাতের গাভী ও ষাঁড় উৎপাদন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের বাংলাদেশের কথা বলা যায়। সরকার বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড় এনে সরকারী খামারে লালনপালন করেন। উক্ত ষাঁড় থেকে কৃত্রিম উপায়ে বীজ সংগ্রহ করে সারাদেশে বিভিন্ন কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। উক্ত বীজ দিয়ে দেশী গাভীর প্রজনন করানো হয়। এ ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ দেশী গাভী থেকে সংকরায়নের মাধ্যমে সংকর গাভী সৃষ্টি করতে পারছে।

সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য নিম্নে সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য দেয়া হলো-

একটি দেশী গাভীকে একটি হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের মাধ্যমে প্রজনন করানো হলে যে বাচ্চা জন্ম নেয় তার দেহে ৫০% দেশী ও ৫০% হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ানের রক্ত থাকে। এই বাছুর বকনা হলে বড় হওয়ার পর হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দিয়ে তাকে প্রজনন করানো হলে বাচ্চার দেহের আদি দেশী মা গাভীর রক্ত আরও অর্ধেক কমে ২৫% হয়ে যাবে।

অর্থাৎ এটি ৭৫% উন্নত জাতের বৈশিষ্ট্য পাবে। এভাবে সংকর গাভী থেকে সাত পুরুষে তাত্ত্বিকভাবে ১০০% খাটি হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান আনা যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম বংশের গাভী বা ষাঁড়ই ৫০% দেশী ও ৫০% হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান রক্ত বৈশিষ্ট্য বহন করে বেশি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে।

 

 

সংকর গরুর উৎস

উন্নত জাতের গরু সংকর গরুর উৎস বা পূর্বপুরুষ। আমাদের দেশে দুধ উৎপাদন করার লক্ষ্যে হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের সাথে দেশী গাভীর কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে সংকর জাত সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। অনেকে শাহিওয়াল ষাঁড়ের সঙ্গেও দেশী গাভীর কৃত্রিম প্রজনন করে থাকেন।

তবে বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায়, হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের বীজ দিয়ে দেশী গাভীকে প্রজনন করিয়ে যে বাচ্চা পাওয়া যায় তা এদেশের আবহাওয়ায় বেশি উৎপাদন দিতে সক্ষম। শক্তি ও মাংসের জন্য বাংলাদেশ এখনও সংকর গাভী উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। আমাদের দেশে মাংস ও শক্তির চাহিদা যথেষ্ট। এই চাহিদা মেটানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version