আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ভেড়ার খাদ্য ও রোগব্যাধি দমন সম্পর্কে – যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট – ৭ এর অন্তর্ভুক্ত |
ভেড়ার খাদ্য ও রোগব্যাধি দমন
গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে ভেড়াই একমাত্র প্রাণী যারা যে কোনো ধরনের খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এরা যেমন খাদ্য ঘাটতির সময় অতি নিম্নমানের লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে, তেমনি শুধু শস্যদানা খেয়েও জীবনধারণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মাংসের জন্য পালিত ভেড়াগুলোকে শুধু শস্যদানাসমৃদ্ধ দানাদার খাদ্যের ওপরই পালন করা হয়। তবে, ভেড়া দানাদার খাদ্যের তুলনায় ঘাসজাতীয় খাদ্য খেতেই বেশি পছন্দ করে। আর কাটা ঘাসজাতীয় খাদ্যের চেয়ে নিজেরা মাঠে চরে (grazing ) ঘাস খেতেই বেশি ভালোবাসে।
পশুসম্পদের (livestock) মধ্যে ভেড়াই একমাত্র প্রাণী যারা তুলনামূলকভাবে অন্য প্রাণীর থেকে বেশি হারে তৃণ বা ঘাসজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। কাজেই ভেড়া থেকে ভালো উৎপাদন পেতে হলে এদেরকে সব সময়ই মাঠে চরাতে হবে। লম্বা ও মোটা ঘাসের চেয়ে খাটো ও চিকন ঘাস এরা বেশি পছন্দ করে। এরা ছাগলের মতো খাদ্যে বৈচিত্র খোঁজে না। উচ্ছিষ্ট খাদ্যও অনায়াসে খায়।
ভেড়ার পাকস্থলী ও পরিপাক ক্রিয়া
ভেড়া গরু, মহিষ ও ছাগলের মতোই রোমন্থক প্রাণী। এদের পাকস্থলীর গঠনও এসব প্রাণীর মতোই। ছাগল ও ভেড়ার পাকস্থলীর গঠন ও পরিপাক ক্রিয়া একই ধরনের।
ভেড়ার খাদ্যের শ্রেণিবিন্যাস
ভেড়ার খাদ্যের শ্রেণিবিন্যাস ছাগলের মতোই। তবে, এদের খাদ্যে আঁশযুক্ত খাদ্যের পরিমাণ দানাদার খাদ্যের তুলনায় বেশি দিতে হয়। কোনো কোনো সময় ভেড়াকে শুধু আঁশযুক্ত খাদ্য দিয়েই পালন করা হয়। এরা বিভিন্ন ধরনের তাজা ঘাস, যেমন- কাউপি, দূর্বা ঘাস, অন্যান্য ছোট ঘাস, সয়াবিন, কলাই, মটর ইত্যাদির পাতা বেশি পছন্দ করে।
এগুলো তাজা ছাড়াও রোদে শুকিয়েও সরবরাহ করা যায়। এতে ভিটামিন-এ সহজেই সংশ্লেষণ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের খৈল, যেমন- তিসির খৈল, সয়াবিন খৈল, তুলাবীজের খৈল থেকে এরা উন্নতমানের আমিষ পেয়ে থাকে। দানাদার খাদ্যের মধ্যে গম, যব, ভুট্টা, সরগম ইত্যাদিই প্রধান। এদের খাদ্যে সাধারণত ফিড অ্যাডিটিভস্ যোগ করা হয় না।
ভেড়ার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও খাদ্যতালিকা
নবজাতক বাচ্চা ভেড়াকে ছাগলের বাচ্চার মতোই জন্মের পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত ওজন অনুপাতে শালদুধ পান করাতে হয়। এরপর ছাগলের নিয়মেই ৪-৫ কেজি ওজন হওয়া পর্যন্ত শুধু দুধের ওপর পালন করতে হয় এবং এরপর থেকেই দৈনিক কিছু কিছু পরিমাণ তৃণজাতীয় খাদ্য মাঠে চরিয়ে খাওয়াতে হয়।
গর্ভবতী ভেড়ীর তুলনায় প্রসূতির খাদ্যতালিকায় অধিক পরিমাণে দানাদার খাদ্য প্রদান করা হয়। তবে, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে পালন না করলে সাধারণত ভেড়ার খাদ্যতালিকায় শস্যদানা খুব কম ক্ষেত্রেই যোগ করা হয়। খামারে ভেড়ী বাচ্চা প্রসবের একমাস পূর্ব থেকে এদের খাদ্যতালিকায় দৈনিক ২০০- ২৫০ গ্রাম হারে দানাদার খাদ্য যোগ করা হয়। ভেড়ীর সারা বছরের খাদ্যতালিকার প্রধান উপাদান হলো রোদে শুকানো ঘাস বা অন্যান্য ঘাসজাতীয় খাদ্য। এরসঙ্গে প্রয়োজনবোধে সীমিত পরিমাণ শস্যদানাপূর্ণ দানাদার খাদ্য দেয়া যাবে।
তাজা ও রোদে শুকানো ডালজাতীয় ঘাস শুধু আমিষই সরবরাহ করে না বরং এ থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-এ ও ডি পাওয়া যায়। সারণি ৩৫, ৩৬ ও ৩৭-এ যথাক্রমে মাংস উৎপাদনকারী, গর্ভবর্তী ও প্রসূতি ভেড়ীর জন্য একটি করে খাদ্যতালিকার নমুনা দেখানো হয়েছে।
সারণি ৩৫ : মাংস উৎপাদনকারী ভেড়ার খাদ্যতালিকা
সারণি ৩৬ : গর্ভবতী ভেড়ীর খাদ্যতালিকা
সারণি ৩৭ : প্রসূতি ভেড়ীর খাদ্যতালিকা
ভেড়ার রোগব্যাধি দমন
যে কোনো প্রাণী থেকে পর্যাপ্ত উৎপাদন পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো এর রোগব্যাধি দমন। গরু, ছাগল, মহিষের মতো ভেড়ার রোগব্যাধি দমনেও প্রায় একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে, ছাগলের রোগব্যাধি দমনের জন্য প্রণিত নীতিমালাগুলো ভেড়ার জন্যও মোটামুটিভাবে প্রযোজ্য। তবে, ভেড়া যেহেতু দলবদ্ধভাবে বাস করে তাই পালের একটি ভেড়া কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে অন্যগুলোর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। ভেড়াতে ছাগলের তুলনায় বহিঃপরজীবীর আক্রমণ বেশি হয়। এদের লম্বা উলে সহজেই বিভিন্ন ধরনের মাছির কীড়া ও আটালি বাসা বাঁধতে পারে ।
ভেড়া দলবদ্ধভাবে থাকার কারণে এগুলো দ্রুত পুরো পালে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভেড়াকে নিয়মিত বহিঃপরজীবীনাশক ওষুধ দিয়ে গোসল করাতে হবে বা এদের উপর বহিঃপরজীবীনাশক ওষুধ ছিটাতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন সংক্রামক রোগ দমনের জন্য নিয়মিত ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শমতো প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কৃমি, যেমন- গোল কৃমি, ফিতাকৃমি, পাতাকৃমি প্রভৃতির আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করাতে হবে। ভেড়ার রোগব্যাধি দমনের জন্য ছাগলের ন্যায় জাতীয়ভিত্তিক ও ব্যক্তিগত দমন ব্যবস্থা অনুসরণ করা যেতে পারে।
ভেড়ার রোগব্যাধি
ছাগল আর ভেড়ার রোগব্যাধি প্রায় একই ধরনের এবং এদের নিরাময় ব্যবস্থাও অনেকটা একই। ভেড়াতে প্রধানত বাদলা, তড়কা, অ্যান্টারোটক্সিমিয়া, ফুট রট, ম্যাস্টাইটিস, খুরা রোগ, স্ক্র্যাপি, বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, গর্ভবতী ভেড়ীর টক্সিমিয়া, কৃমি ও বহিঃপরজীবীর আক্রমণ ইত্যাদিই বেশি দেখা যায়। এসব রোগব্যাধি স্থানীয় ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো উচিত।
আরও দেখুনঃ