আমাদের আজকের আর্টিকেলটি মহিষের জাত ও বৈশিষ্ট্য – যা বাউবি বিএজএড ২৩০৪ গৃহপালিত পশুপালন ইউনিট-৩ এর অন্তর্ভুক্ত |
মহিষের জাত ও বৈশিষ্ট্য
পৃথিবীতে বহু জাতের গৃহপালিত মহিষ রয়েছে। তবে, আবাসস্থল ও পরিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে মহিষকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
নদীর মহিষ (River Buffalo )
জলাভূমির মহিষ (Swamp Buffalo )
নদীর মহিষ:
নদীর মহিষের বৈশিষ্ট্য:
নদীর মহিষের বুক প্রশস্ত, দেহ সাধারণত মাংসল ও অপেক্ষাকৃত কম গোলাকৃতির। শিংয়ের আকার ও আকৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে। ভারত এবং পাকিস্তানে নদীর মহিষের অনেকগুলো জাত দেখা যায়। মহিষ ষাঁড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৩০০-৭০০ ও ২৫০-৬৫০ কেজি হয়। সাধারণত মহিষ ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা যথাক্রমে ১২০-১৫০ ও ১১৫-১৩৫ সে.মি. হয়। নদীর মহিষের দেহ তুলনামূলকভাবে লম্বা, বুকের বেড় কম, পা খাটো, মাথা ভারি, কপাল প্রশস্ত ও মুখাকৃতি লম্বা।
নদীর মহিষের শিংয়ের আকার জলাভূমির মহিষের মতো নয় এবং শিংয়ের অবস্থান ঠিক কপালের একই জায়গায় নয়। এই মহিষের শিং দু’প্রকার। যথা- গোলাকৃতি ও সোজা। এরা সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানে বাস করতে পছন্দ করে এবং পানির মধ্যে দেহ ডুবিয়ে রাখে। বিভিন্ন জাতের নদীর মহিষের মধ্যে মুররা, নীলি, রাভি, সুরাটি, মেশানা, জাফরাবাদি ইত্যাদি প্রধান। এখানে নদীর মহিষের কয়েকটি জাতের উৎপত্তি, প্রাপ্তিস্থান ও বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
মুররা জাতের মহিষ
মুররা দুধ উৎপাদনকারী জাতের মহিষ।
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
ভারতের অন্তর্গত হারিয়ানা, রোহিটাক, হিসার, কার্নাল, দিল্লী এদের আদি ভূমি। তবে পাক-ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃতি দেখা যায়।
জাত বৈশিষ্ট্য
এদের গায়ের রঙ ঘন কালো ও ধূসর। দেহের গঠন ও আকার বেশ বড়। শিং হালকাপাতলা এবং অগ্রভাগ কোকড়ানো। গাভীর মাথা নিখূত ও তুলনামূলকভাবে ছোট। কপাল বড়, চওড়া ও উন্নত। গাভীর ঘাড় সরু ও লম্বা। বুকের গড়ন খুবই উন্নত। পা খাটো ও মোটা, পায়ের খুরের রঙ ঘন কালো, ওলান গ্রন্থি বেশ বড়। দেহের পশ্চাৎভাগ অপেক্ষাকৃত ভারি ও চওড়া। ষাঁড়ের উচ্চতা ১৪০- ১৪২ সে.মি.। ষাঁড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৫৬৭ ও ৫৩০ কেজি। মুররা দুধ উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। এরা ৩০০ দিনে ১৪০০-২০০০ লিটার দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ ৭%। বাছাইকৃত উৎকৃষ্ট মুররা গাভী বার্ষিক ২৫০০-৩৫০০ লিটার দুধ দিতে সক্ষম। বলদ মহিষ হালচাষ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই জাতের মহিষ ভারত ও পাকিস্তানে প্রধান দুগ্ধ ও মাখন উৎপাদক পশু হিসেবে বিখ্যাত।
নীলি জাতের মহিষ
এই জাতের মহিষের সাথে মুররা মহিষের বেশ মিল আছে। এদের অনেক বৈশিষ্ট্য প্রায় এক রকম। বিজ্ঞানীদের মতে মুররা জাত থেকেই এদের উদ্ভব হয়েছে। তবে আকার, মুখাকৃতি ও কপালের মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যমান।
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার শতদ্রু নদীর উভয় পার্শ্বে এদের আদি বাসভূমি। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নীলি জাতের মহিষ পাওয়া যায়। শতদ্রু নদীর নীল পানির বর্ণনায় এদের নামকরণ নীলি রাখা হয়েছে।
জাত বৈশিষ্ট্য
এদের গায়ের ও পশমের রঙ কালো। কিন্তু, ১০-১৫% বাদামি রঙেরও দেখা যায়। দেহাকৃতি মাঝারি ধরনের। কপাল, মুখ, থুতনি, পা এবং লেজের অগ্রভাগে সাদা চিহ্ন দেখা যায়। অনেকটা লম্বাকৃতির মাথার উপরিভাগ স্ফীত এবং দু’চোখের মধ্যবর্তী স্থান একটু চাপা। ওলান এবং সিনায় মাঝে মাঝে পিঙ্গল চিহ্ন দেখা যায়। শিং ছোট ও শক্তভাবে প্যাঁচানো, ঘাড় লম্বা, চিকন ও মসৃণ। ওলান উন্নত, লেজ লম্বা। ষাঁড় ও গাভী মহিষের গড় উচ্চতা যথাক্রমে ১৩৭ ও ১২৭ সে.মি., দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৭ ও ১৪৭ সে.মি.।
রাভি জাতের মহিষ
এই জাতের মহিষ দুধের জন্য প্রসিদ্ধ।
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
পাক-ভারতের অন্তর্গত রাভি নদীর উভয় পার্শ্বে এদের আদি বাসভূমি। এজন্য এদের নাম রাভি রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের লায়ালপুর জেলা, ওকারা, মন্টগোমারি, ভারতের গুজরাট ও চিনাব নদীর উপত্যকায় এবং ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এদের পাওয়া যায়।
জাত বৈশিষ্ট্য
রাভি মহিষ বৃহদাকৃতির শরীরের অধিকারী। গাভীর মাথা মোটা ও ভারি। মাথার মধ্যভাগ উত্তল, শিং প্রশস্ত, মোটা ও কোকড়ানো। থুতনি স্পষ্ট, ওলান সুগঠিত। লেজ বেশ লম্বা এবং প্রান্তদেশে সাদা লোম আছে। গায়ের রঙ কালো, তবে কোনো কোনো সময় বাদামি রঙেরও হয়। ষাঁড় ও গাভী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৩২ ও ১২৭ সে.মি., দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৪ ও ১৪৯ সে.মি. এবং ওজন যথাক্রমে ৬০০ ও ৬৪৫ কেজি।
জাফরাবাদি জাতের মহিষ
জাফরাবাদি গাভী দুধ উৎপাদনকারী এবং ষাড় চাষাবাদ ও গাড়ি টানার জন্য বিখ্যাত।
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের গুজরাট, গির অরন্য ও জাফরাবাদ শহরের আশেপাশে এই জাতের মহিষ দেখা যায়। জাফরাবাদের নামানুসারে এদেরকে জাফরাবাদি বলা হয়।
জাত বৈশিষ্ট্য
এরা আকারে বড়, দেহ গভীর ও সুগঠিত। কপাল স্ফীত, শিং ভারি এবং চ্যাপ্টা। গায়ের রঙ কালো তবে মুখ, পা এবং লেজে সাদা দাগ দেখা যায়। ঘাড় মাংসল, গলকম্বল ও ওলান সুগঠিত। এদের দেহ লম্বাটে, পা লম্বা ও সরু, লেজ খাটো। ষাড় ও গাভী মহিষের ওজন যথাক্রমে ৫৯০ ও ৪৫০ কেজি। গাভী দিনে গড়ে ১৫-২০ লিটার দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ খুব বেশি। ষাড় চাষাবাদ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
সুরাটি জাতের মহিষ
সুরাটি গাভী দুধ উৎপাদনকারী এবং ষাঁড় চাষাবাদ ও গাড়ি টানার জন্য বিখ্যাত।
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
গুজরাটের সুরাট জেলার নামানুসারে এই জাতের মহিষের নাম সুরাটি দেয়া হয়। গুজরাটের সুরাট ও কয়রা জেলায় এদের বাসস্থান। তাছাড়া মহারাষ্ট্র প্রদেশেও এই জাতের মহিষ প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায়।
জাত বৈশিষ্ট্য
গায়ের রঙ কালো অথবা বাদামি। এরা মাঝারি আকৃতির। মাথা লম্বা ও প্রশস্ত। শিংদ্বয় কাস্তের ন্যায় এবং মাঝারি ধরনের। চোখ উজ্জ্বল, পিঠের পেছনের দিক প্রশস্থ এবং সুগঠিত। ওলান সুগঠিত এবং বাটগুলো সুবিন্যস্ত। ষাঁড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৪৯৯ ও ৪০৮ কেজি। এরা ভালো দুধ উৎপাদনকারী মহিষ, ৩০০ দিনে ২৫০০-৩০০০ লিটার দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ ৭.৫%। ষাঁড় হালচাষ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
মেশানা জাতের মহিষ
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
গুজরাট প্রদেশের বারোদা অঞ্চল ও মেশানা জেলা এদের আদি বাসস্থান। মুররা এবং সুরাটি মহিষের সংকরায়নের মাধ্যমে মেশানা জাতের উৎপত্তি ।
জাত বৈশিষ্ট্য
এরা মুররা এবং সুরাটি মহিষের মধ্যবর্তী, দেহে দু’জাতেরই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। গায়ের রঙ কালো, বাদামি বা ধূসর। মুখমন্ডল, পা এবং লেজের অগ্রভাগে সাদা দাগ আছে। দেহ লম্বা এবং সুগঠিত। কপাল প্রশস্থ, মাঝের অংশ কিছুটা নিচু, শিং কোকড়ানো এবং দেখতে কাস্তের মতো। কান মাঝারি এবং অগ্রভাগ চোখা। ঘাড় মাংসল, সুগঠিত, গলকম্বল নেই। বুক প্রশস্ত, কাঁধ চওড়া এবং দেহের সাথে সুবিন্যস্ত, পা মাঝারি আকারের। ওলান সুগঠিত ও উন্নত। ষাঁড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে ৪৫০ ও ৬৫০ কেজি। এই জাতের মহিষ ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে দুধ ও ঘি সরবরাহের জন্য সুপরিচিত। দুধ উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। এরা নিয়মিত বাচ্চা প্রদানের জন্যও বিখ্যাত।
জলাভূমির মহিষ (Swamp Buffalo )
জলাভূমির মহিষের বুক সাধারণত চওড়া, দেহ মাংসল ও গোলাকৃতির যা দেখতে অনেকটা ব্যারেলের মতো। এদের শিং বেশ চওড়া, লম্বা ও চন্দ্রাকৃতির। ষাড় ও গাভীর ওজন সাধারণত যথাক্রমে ৫০০ ও ৪০০ কেজি। ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা সাধারণত গড়ে ১৩৫ সে.মি. হয়ে থাকে। এদের পা খাটো এবং কপাল ও মুখমন্ডল চ্যাপ্টা। গায়ের রঙ গাঢ় ধূসর থেকে সাদা হয়। চামড়ার রঙ নীলচে কালো থেকে ধূসর কালো হয়ে থাকে।গলকম্বলের উপরিভাগ থেকে গলার পাদদেশ পর্যন্ত বক্রাকৃতির দাগ থাকে।
এরা অত্যন্ত কম দুধ উৎপাদন করে, দৈনিক গড়ে ১ লিটারের মতো যা বাছুরের জন্যই যথেষ্ট নয়। এরা ৩৯৪ দিনে গড়ে মাত্র ৩৩৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। শারীরিক বৃদ্ধির হার কম, ফলে বয়ঃপ্রাপ্তি বিলম্বে ঘটে; সাধারণত তিন বছরের পূর্বে পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে না। গর্ভকাল ৩২৫-৩৩০ দিন। সাধারণত নিচু কর্দমাক্ত জলাভূমিতে থাকতে পছন্দ করে, কাদায় গড়াগড়ি দেয় এবং জলাভূমি ও আইলের মোটা আঁশজাতীয় ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এরা প্রধানত শক্তির কাজেই পটু৷ তাই হাল, মই ও গাড়ি টানার কাজে এরা ব্যবহৃত হয়। দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম কিন্তু মাংসের জন্য ভালো।
কোয়া কাম ও কোয়াইটুই (Kwua Cum and Kwaitui)
এই দু’জাতের মহিষ থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। কোয়াইটুই মহিষের দেহ দীর্ঘ ও প্রশস্ত। গায়ের রঙ কালো, চামড়া পুরু, মুখমন্ডল লম্বা। গাভীর গলা সরু। উচ্চতা ও ওজন গড়ে
যথাক্রমে ১৪০ সে.মি. ও ৪৫০ কেজির মতো।
কোয়াকুয়ে মহিষ ( Kwa kui)
এরা আকারে তুলনামূলভাবে খাটো। দেহ ও গলা সরু, ঘাড় সরু, মুখমন্ডল লম্বা। গায়ের রঙ হালকা ধূসর। উচ্চতা ও ওজন গড়ে যথাক্রমে ১৩০ সে.মি. ও ৩৫০ কেজির মতো। এরা হাল-চাষ ও ভারবাহী জন্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কোয়াইপ্ৰা (Quipra)
এই উপজাতের মহিষ থাইল্যান্ডের মি সড টক (Mae Sod Tak) অঞ্চলে দেখা যায়। এরা আকারে ছোট। ওজন ৩০০-৩৫০ কেজির মতো। বন্য স্বভাবের কারণে এদের কদর তুলনামূলকভাবে কম।
ম্যারিড (Marid)
এই উপজাতের মহিষ মায়ানমারে দেখা যায়। মায়ানমারের সমতলভূমির মহিষ থেকে এরা আকারে ছোট। দেহের কালো লোমগুলো দীর্ঘ, সরু ও খাড়া। ষাঁড় ও গাভীর ওজন গড়ে যথাক্রমে ৩০০ ও ৩২৫ কেজির মতো।
লাল মহিষ (Red Buffalo )
এই উপজাতের মহিষ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যায়। এদের দেহ ঘন ও লম্বা লাল রঙের লোমে আবৃত থাকে। তাই এদের নাম লাল মহিষ। এদের দৈহিক ওজন গড়ে সাধারণত ৩৫০ কেজি হয়ে থাকে।
তবে, গায়ের রঙ, দেহের গঠন ও ব্যবহারর দিক থেকে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার জলাভূমির মহিষের সঙ্গে ভারতের আসামের পশ্চিমাঞ্চলের মহিষের পার্থক্য দেখা যায়। এদের গায়ের রঙ কালো। শিং অনেকটা কাস্তের মতো বাঁকা। এরা প্রধানত দুধ উৎপাদনকারী জাত। বিজ্ঞানী মিগেগর ১৯৩৯ সালে এদেরকে নদীর মহিষ হিসেবে নামকরণ করেন। এদের উৎপত্তি ভারত ও পাকিস্তানে, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চালেও এদের দেখতে পাওয়া যায়।
মনিপুরি মহিষ
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
আসামের অন্তর্গত মনিপুর এদের আদি বাসস্থান। আসামের প্রায় সর্বত্র এবং বাংলাদেশের সিলেটে দেখতে পাওয়া যায়।
জাত বৈশিষ্ট্য
এদের গায়ের রঙ ধূসর। এরা সুঠাম দেহের অধিকারী। মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। শিং বড় এবং ভেতরের দিকে বাকানো। এরা সব রকমের খাদ্যে অভ্যস্থ। এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ষাঁড় ও গাভীর ওজন যথাক্রমে প্রায় ৫০০ ও ৬০০ কেজি।
বাংলাদেশের মহিষ
বর্তমানে বাংলাদেশে মহিষের সংখ্যা প্রায় ৬,২১,৪৮৭। এর মধ্যে প্রায় ৫৪,০০০ মহিষ শক্তির কাজে নিয়োজিত থাকে। এদেশে মহিষের কোনো উল্লেখযোগ্য জাত নেই। উপকূলীয়, হাওর এবং আখ উৎপাদনকারী এলাকাসমূহে মহিষের বিস্তৃতি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের মহিষকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- নদী, জলাভূমি এবং নদী ও জলাভূমির মহিষের সংকর।
দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্য সমতলভূমিতে নদীর মহিষ দেখা যায়। এরা প্রধানত ভারতের দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের মহিষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দেশের পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় জলাভূমির মহিষ ও সংকর মহিষের অবস্থান। দূরপ্রাচ্যের জলাভূমির মহিষ ও আদি মহিষের সাথে এদের বেশ মিল রয়েছে। বাংলাদেশের জলাভূমির মহিষ মূলত শক্তির কাজে ব্যবহৃত হয়। এদের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম।
দক্ষিণাঞ্চলে ছোট ছোট কৃষক পরিবারে ১-৪টি পর্যন্ত মহিষ দেখতে পাওয়া যায়। গাভী দিনে ১-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।
দুধ প্রধানত মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গরুর দুধের চেয়ে মহিষের দুধ বাজারে কম দামে বিক্রি হয়। দুধে স্নেহের ভাগ বেশি। গবাদিপশুর মাংসের মধ্যে মহিষের মাংস বাজারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গাড়ি টানা, ঘানি টানা, হালচাষ, সেচকার্য, ধান মাড়াই প্রভৃতি শক্তির কাজে এরা ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মহিষ প্রধানত দেশী মহিষ হিসেবেই পরিচিত। দেহের আকার, গড়ন এবং রঙের দিক থেকে এদের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শিংয়ের আকার এবং গড়নও ভিন্নতর। প্রাণিজ আমিষজাতীয় খাদ্যের চাহিদা, পশুশক্তির ঘাটতি প্রভৃতি মেটানোর জন্য উন্নত প্ৰজনন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এদেশের মহিষের উন্নতি অত্যাবশ্যক।
আরও দেখুনঃ